নেত্রকোণার মদনের পল্লীতে দুই পক্ষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৫ মাস ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

আজ শনিবার (৫ জুন) সকালে ৬টি গ্রামের মসজিদের মাইকে সংঘর্ষের ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একত্রিত হয় হাজারো লোক। বৃষ্টি থাকায় অস্ত্রে সজ্জিত লোকজন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা যায়, নায়েকপুর ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের মানিক মিয়া জনতা বাজারের ২ শতাংশ ভূমি একই ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের ফৌজদার মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন। ফৌজদার মিয়ার ক্রয়কৃত ভূমিতে দোকানঘর নির্মাণ করায় মানিক মিয়ার টিনশেড, ফৌজদার মিয়া ও শান্তু মিয়ার নবনির্মিত আধাপাকা দোকানঘর ভেঙে ফেলে বাজার কমিটি ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় মাখনা গ্রামের ফৌজদার মিয়ার ছেলে সোহেল খান বাদী হয়ে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুল হকসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরই জেরে নোয়াগাও, বাউসা, তালুককানাই আলমশ্রী ও সোনাখালী- এই ৫ গ্রাম এক দল হয়ে মাখনা গ্রামের সাথে এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিংহের বাজারের পাশে গৌরার হাওরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই দিন পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। এভাবে ৫ মাস ধরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় সংঘর্ষে অতিষ্ঠ স্থানীয় প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, সংঘর্ষের পর থেকে নোয়াগাও, বাউসা, তালুককানাই আলমশ্রী, সোনাখালী (৫ গ্রামের) লোকজনদের সাথে মাখনা গ্রামের লোকজনের কোনো যোগাযোগ নেই। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ৫ মাস ধরে জনতা বাজারে মাখনা গ্রামের কোনো লোকজন যাতায়াত না করায় মাখনা গ্রামের কয়েকটি দোকান এখন পর্যন্ত বন্ধ। কোনো অনুষ্টান বা কেই মারা গেলে যাতায়াত করলেই গুনতে হবে জরিমানা এমনটাই সিদ্ধান্ত স্থানীয় মাতুব্বরদের। জরিমানার ভয়ে অনেকেই আত্মীয়তার সর্ম্পক নষ্ট করছেন।

নায়েকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রোমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও মাতুব্বরদের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। শনিবার আবারও ৬ গ্রামের হাজারো লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহাণির আশঙ্কা রয়েছে।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে নায়েকপুর ইউনিয়নে ৬ গ্রামের লোকজনের উত্তেজনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি দফায় দফায় দু’পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলতেছি। আধিপত্য বিস্তারের জন্য উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষের ঘোষণা দেয়।

আজ শনিবার উত্তেজনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ রয়েছে।